আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের জেলা খ্যাত চঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানগুলোতে এবার ব্যাপক পরিমাণে মুকুল এসেছে। ইতোমধ্যে মুকুলে আমের গুটিও আসতে শুরু করেছে।
ভালো ফলনের আশায় বাগান পরিচর্যা করছেন চাষিরা। তবে কীটনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাগানের পরিচর্যায় হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি চাচ্ছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আম। ফজলি, খিরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়াসহ দেড় শতাধিক সুস্বাদু জাতের আম উৎপাদন হয় এ জেলায়। এখানে উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান হওয়ার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আম গাছ। ফাগুনের হাওয়ায় আম গাছের ডালে ডালে দোল খাচ্ছে সোনালী রঙ-এর মুকুল। এরই মধ্যে মুকুলে আসতে শুরু করেছে গুটি। আর এমন দৃশ্য এখন শুধু গ্রামীণ জনপদেই নয়, শহরের গাছে গাছেও শোভা পাচ্ছে। আর এ দেখে শুধু আম চাষিরাই নয় সংশ্লিষ্ট সবাই এবার আমের ভালো ফলনের সম্ভাবনার কথা বলছেন।
আরও পড়ুন: সিলেটের গোলাপগঞ্জে গাছে গাছে আমের মুকুল, বৃষ্টি না হলে ক্ষতির আশঙ্কা
আম চাষিরা জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। ফলে গাছে গাছে ব্যাপক পরিমাণে মুকুল এসেছে। বর্তমানে মুকুলে আমের গুটি আসতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার জেলায় আমের বাম্পার ফলন আশা করছেন তারা। সেই সেঙ্গে ভালো লাভের আশাও করছেন। আর সেই আশাতেই বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন আম চাষিরা।
তবে এবার বাগানের পরিচর্যার খরচ বেড়েছে অনেক বলে জানালেন আম চাষিরা। কীটনাশক, বালাইনাশকসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদেরকে। আর এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
আম চাষি আব্দুর রাকিব বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পাওয়েল এলাকায় আমার আম্রপালির একটি বাগান আছে। বাগানে এক হাজার গাছ আছে। এ বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে বাগানে ব্যাপক মুকুল হয়েছে। বর্তমানে মুকুল থেকে গুটি আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এ বছর বাগানের পরিচর্যার খরচটা অনেক বেড়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, গতবার এক লিটারের এক বোতল কীটনাশকের দাম ছিল ৫০০টাকা। এবার দাম হয়েছে ৮০০ টাকা। প্রতি লিটার বোতলে ৩০০টাকা বেড়েছে। গতবার যে ছত্রাকনাশক কিনেছি ৯০০ টাকা, এবার কিনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাগানে সেচ খরচও বেড়েছে। পাশাপাশি লেবার খরচও বেড়েছে।
এই আম চাষি জানান, গতবার যে লেবারকে দিতাম ৪০০টাকা এবার তাকে ৫০০টাকার ওপর দিতে হচ্ছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
তিনি জানালেন যে এখন পর্যন্ত তার বাগান পরিচর্যায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার টাকা। সামনে আম পাড়া পর্যন্ত বাগানের আরও পরিচর্যা করতে হবে।
আরও পড়ুন: দালানে ঠাসা শহর খুলনায় আমের মুকুলের শোভা
আরেক চাষি আজম আলী বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার সব বাগানে প্রচুর মুকুল এসেছে। আমরা পরিচর্যা করছি। আর এবার কীটনাশকের দাম বেশি। লেবারের খরচও বেশি। তার পরেও বাগানের পরিচর্যা করছি। তবে গাছ ভরা মুকুল এলেও খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা কিছুটা চিন্তিত।
একই কথা জানালেন ময়েজ হোসেনসহ আরও অন্যান্য চাষি।
তারা বলছেন, এখন সরকার যদি এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেয়, একটু নজর দেয় তাহলে তাদেরে জন্য হয়তো কিছুটা সহায়ক হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯০ শতাংশের বেশি গাছে মুকুল এসেছে। বাগান পরিচর্যায় চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর চার লক্ষাধিক মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি বিভাগের হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর থেকে চার লাখ ৪০ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন আম উপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছেল তিন লাখ ১৩ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন।